বৈধ ভিসাধারী ৫ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি বিদেশির রেকর্ড পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এসব নথিতে তারা খতিয়ে দেখছে ওই বিদেশিরা অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করে এমন কোনো কাজ করেছে কিনা, যার জন্য তাদের ভিসা বাতিল বা দেশ থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, সব মার্কিন ভিসাধারীই ‘নিরবচ্ছিন্ন যাচাই-বাছাইয়ের’ আওতায় পড়েন। এর মাধ্যমে দেখা হয়, তাদের এমন কোনো কার্যকলাপ আছে কিনা, যা তাদের ভিসা পাওয়ার অযোগ্য করতে পারে। যদি এমন তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে ভিসা বাতিল হবে এবং সংশ্লিষ্ট ভিসাধারী যদি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন, তবে তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে।
পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ভিসা বাতিলের সম্ভাব্য সব কারণগুলো তারা খতিয়ে দখছে। এর মধ্যে রয়েছে—ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি, কোনো ধরনের ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপে’ জড়িত থাকা বা ‘সন্ত্রাসী সংগঠনকে’ সহায়তা করা।
দপ্তর আরও জানায়, ‘আমরা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় সব ধরনের তথ্য পর্যালোচনা করি। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা অভিবাসন সংক্রান্ত নথি এবং ভিসা ইস্যুর পর প্রকাশ্যে আসা এমন যেকোনো তথ্য যা ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপকভাবে অভিবাসনবিরোধী অভিযান চালাচ্ছেন। এতে বৈধ অবস্থানকারীদের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসীরাও নজরদারিতে রয়েছেন।
সরকার শুরুতে বলেছিল, কেবল বিপজ্জনক অপরাধীদের লক্ষ্য করা হবে। তবে বর্তমানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০২৫ সালেই সরকার প্রায় চার লাখ মানুষকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার পথে রয়েছে।
মার্কিন ভিসায় নতুন ফি: যুক্তরাষ্ট্রে যেতে খরচ বাড়বে বাংলাদেশিদেরওমার্কিন ভিসায় নতুন ফি: যুক্তরাষ্ট্রে যেতে খরচ বাড়বে বাংলাদেশিদেরও
কর্তৃপক্ষ কর্মরত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অভিযান চালিয়েছে। রেস্তোরাঁ, নির্মাণ প্রকল্প ও খামারে যেমন হানা দেওয়া হয়েছে, তেমনি আদালত প্রাঙ্গণ থেকেও আটক করা হয়েছে অভিবাসীদের, যেখানে তাঁরা বৈধকরণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সিভিল অ্যাপয়েন্টমেন্টে হাজির হয়েছিলেন।
সরকার মানবিক প্যারোল এবং টেম্পোরারি প্রটেক্টেড স্ট্যাটাস (টিপিএস) কার্যক্রমও সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব ব্যবস্থার আওতায় প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হওয়া বিভিন্ন দেশের কয়েক লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার অধিকার পেয়েছিলেন।
একইভাবে, শিক্ষার্থী ভিসাধারীরাও নজরদারির শিকার হচ্ছেন। পররাষ্ট্র দপ্তর এ সপ্তাহের শুরুর দিকে জানিয়েছে, এ বছর ৬০০০ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। দপ্তরের দাবি, এসব শিক্ষার্থী হয় ‘আইন ভেঙেছে নয় তো সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেছে।’
তবে নথিভুক্ত অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কেবল ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন বা মতামতমূলক লেখা লিখেছিলেন, যা আসলে মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারভুক্ত। আবার কিছু শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হয়েছে, অথচ তারা কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেই অংশ নেননি।
এই নজরদারির কথা প্রকাশ্যে আসার পর কিছু সময় পরই বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা দেন, দেশটিতে বাণিজ্যিক ট্রাক চালকদের জন্য সব ধরনের কর্মী ভিসা দেওয়া তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা হচ্ছে। রুবিও এক্স-এ দাবি করেন, বিদেশি ট্রাক চালকেরা ‘আমেরিকানদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে এবং দেশি ট্রাকচালকদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’