চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের উপর নিজস্ব গাড়িতে মুখোশধারী দূর্বৃত্তের ব্রাশফায়ারে খুন হয়েছে রাউজানের বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম চৌধুরী (৫০)। ৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার) বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট ব্রীজের উত্তাংশে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুল হাকিম চৌধুরী রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচ খাইন এলাকার মৃত আলী মদন চৌধুরীর পুত্র। এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাউজান থেকে মোটরসাইকেল যোগে মুখোশ পরিহিত ৬-৭ জন ভারি অস্ত্রসহকারে মদুনাঘাট ব্রীজ পার হয়ে রাউজানের প্রবেশমুখ ওয়াসার সেখানে অবস্থান করে। একটু পরে সাদা পাজেরো করে রাউজান হতে শহরে যাওয়ার পথে সেখানে পৌঁছালে মুখোশধারীরা প্রথমে তার গাড়ির সামনের চাকায় গুলি করে। পরে গাড়ির সামনের গ্লাস এবং বাম পাশের সামনের দরজার গ্লাসের দিয়ে চালকের পাশের আসনে বসে থাকা হামিক চৌধুরীকে লক্ষ্য করে ৮-১০ টি ব্রাশ ফায়ার করে দূর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। গুলি গাড়ির একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে অন্যপাশ ভেদ করে চলে যায়। ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা এসে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে তাকে নগরীর এভার কেয়ার হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মদুনাঘাট তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস তার মৃত্যুর বিষটি নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানানো হবে।
রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ জানান, কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে এখনও বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। ঘটনার প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে ঘটনাস্থলের উভয় দিকে মাইলখানেক যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা মহাদূর্ভোগে পতিত হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে নিহত আবদুল হাকিম বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।গত ২০২২ সালের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া ও নোয়াপাড়ার যুবলীগ নেতা সেকান্দরের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তাদের সহযোগিতায় ব্রাহ্মণহাটে গরুর খামার এবং ব্রাহ্মণহাটের নোয়াপাড়া অংশে সড়ক ও জনপদ জায়গা দখল করে মার্কেট তৈরি করে গৃহনির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এরপূর্বে দেশ হারবাল নামে তার একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ছিল। তিনি সিনেমা পাইরেসির সাথেও যুক্ত ছিলেন। একারণে বিগত সরকারের আমলে কয়েকবার আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হন।
৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পুনরায় রাউজানে সাবেক সংসদ বিএনপি নেতা আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি ব্রাহ্মনহাট এলাকায় তার হামিম এগ্রো নামে বিরাট গরুর খামার, কাপ্তাই নতুন রাস্তার মাথায় গরু বিক্রয় কেন্দ্র এবং ব্রাহ্মণহাটে নোয়াপাড়া অংশে গৃহনির্মাণ সামগ্রির ব্যবসা রয়েছে। এছাড়াও কর্ণফুলীর বালুর ব্যবসাও তার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে জানা যায়। তবে, কি কারণে, কারা তাকে খুন করেছে সে সম্পর্কে পুলিশ এখনও সঠিক তথ্য উদঘাটন করতে পারে নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এপর্যন্ত রাউজানে যে ৯টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তাদের মধ্যে ৩ জন ছাড়া ( ১ জন ব্যবসায়ী, ১ জন শ্রমিক লীগ ও ১ জন যুবলীগের কর্মী) বাকীরা ৬ জনই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এরা হলেন, হলদিয়ার যুবদল নেতা কমর উদ্দিন জিতু, বাগোয়ানের যুবদল নেতা আব্দুল্লাহ মানিক, রাউজান সদরের যুবদল কর্মী মো. ইব্রাহিম, কদলপুরের যুবদল নেতা মো. সেলিম, যুবদল নেতা মো. দিদারুল আলম ও সর্বশেষ বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম চৌধুরী।
এদিকে বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম চৌধুরীকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের নোয়াপাড়ায় এবং চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের মুন্সির ঘাটা এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে ও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বিএনপির নেতারা।

