শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

চার নারী বিপ্লবীর গল্প

প্রকাশিত :

রহিমা আক্তার মৌ

  1. চলছে আগস্ট মাস, জুলাই বিদায় নিলেও ২০২৪ সালের হিসাবে জুলাই শেষ হয়েছে মাত্র দুদিন আগে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে নারীর বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। ঘরে-বাইরে, আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের নারীরা সবসময় অগ্রভাগেই ছিলেন। জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত সরাসরি অংশ নেওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলছিলেন তাদের সেসব দিনের কথা।

জাকিয়া শিশির

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

জাকিয়া শিশিরের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানেই কর্মজীবন শুরু করেন শিশির। ইন্ডিভিজুয়াল কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন। ‘দ্রোহ যাত্রা’ ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেদিনের অভিজ্ঞতা ও অংশগ্রহণ নিয়ে জাকিয়া শিশির বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার পর গ্রেপ্তার সবাইকে মুক্ত করে দিতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে ডাকা কর্মসূচি ‘দ্রোহ যাত্রা’। পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী ২ আগস্ট শুক্রবার বিকাল ৩টার পর জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে এ যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষার্থী, বিভিন্ন পেশাজীবীসহ শিল্পীসমাজ এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। প্রেস ক্লাব থেকে দ্রোহ যাত্রার সমাবেশ শেষে বিকাল ৪টায় মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছাই আমরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গ্রেপ্তারদের মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে ‘দ্রোহ যাত্রা’ কর্মসূচিতে অংশ নেয় হাজারো মানুষ। সহিংসতায় নিহতদের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থী-জনতার সম্মিলিত অবস্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ১১টার পর থেকে ঢাকার পথে মানুষের ঢল নামে। কারফিউ উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করে তারা। একপর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সকালে কয়েকবার নামতে গিয়েও বাধা পাই, দুপুরে টিভিতে দেখি হাসিনার পলায়নের খবর। ২টা নাগাদ পথে বেরিয়ে পড়ি। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। নারী-পুরুষ সবার মাঝে সেদিন আনন্দের বাঁধভাঙা জোয়ার দেখেছি। ভবিষ্যৎ রাজনীতি আর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে প্রত্যাশা দুর্নীতিমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক মানবিক দেশ গঠনের।

সুরাইয়া আক্তার স্বর্ণা

রাজশাহী

সুরাইয়া আক্তার স্বর্ণার জন্ম রাজশাহীতে। রাজশাহীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনাল শেষ করে আবৃত্তি শিক্ষক হিসেবে যুক্ত আছেন। ঐতিহাসিক আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদ ও ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ সম্পর্কে সুরাইয়া আক্তার স্বর্ণা বলেন, ‘আমাদের কারোই ঘুম নেই ৪ আগস্ট রাতে, যেহেতু ৫ আগস্ট লং মার্চ টু ঢাকা ডাকা হয়েছে। ৫ তারিখ সকাল ১১টায় তালাইমারি মোড় থেকে আমাদের আন্দোলন শুরু হবে। আমাদের গন্তব্য হবে তালাইমাড়ি থেকে জিরো পয়েন্ট। সকাল ১১টার মধ্যে তালাইমাড়ি উপস্থিত হই, ঘণ্টাখানেক পরে আমরা সেখান থেকে জিরো পয়েন্টের উদ্দেশে রওনা দিই। সেদিন আমাদের সবার হাতে ছিল লাঠি, ঢিল, আর মেয়েদের ব্যাগে ছিল পানিতে গুলানো মরিচগুঁড়ো। মেয়েদের লাইনের সামনে একটা ছেলেদের লাইন ছিল এবং পেছনে একটা ছেলেদের লাইন ছিল। আমাদের ছেলেদের লাইনটা আলুপট্টি মোড় পর্যন্ত চলে যায়। আর আমরা মেয়েরা শাহ মখদুম কলেজ থেকে একটু সামনে গিয়ে থেমে যাই। সেখানে ছাত্রলীগের ছেলেপেলেদের সঙ্গে আমাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয় বেশ কিছুক্ষণ। আমাদের লক্ষ করে টিয়ার শেল ছোড়া হয়। আর সে সময় আমার শরীরটা খারাপ লাগতে শুরু করে। আমার সঙ্গে যে সঙ্গীরা ছিলেন, তারা আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। আমাদের সবার মুখে পেস্ট লাগানো থাকলেও টিয়ার শেলের ধোঁয়া আমাদের চোখে-মুখে লাগায় অনেক জ্বালা করছিল। পুলিশ বাহিনী একের পর এক টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে। নিজেদের জীবন বাঁচাতে যে যার মতো পেছনে ছুটতে শুরু করি। তারা আমাদের ওপর গুলি করা শুরু করে। সেদিন আমরা এতজন ছিলাম যে দৌড়াতে গিয়ে একজন আরেকজনের পায়ের সঙ্গে বেঁধে যাচ্ছিলাম। পায়ের কাছে এসে টিয়ার শেল পড়ার কারণে আমার হাত-পা পুরো জ্বালা করছিল। পাশে একটা গলি ছিল, আমরা ভুল করে সেই গলিতে ঢুকে যাই। সেই গলিতে কোনো নিরাপত্তাই ছিল না। আমি অসুস্থ বলে সঙ্গীরা কেউই আমাকে ফেলে কোথাও যাননি। আমি পানির জন্য ছটফট করছিলাম শুধু। এই ’২৪-এর আন্দোলন আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা।’

ঈপ্সিতা চৌধুরী

দিনাজপুর

দিনাজপুরের মেয়ে ঈপ্সিতা চৌধুরী। মা-বাবা দুজনেই চাকরিজীবী। বর্তমানে দিনাজপুরের একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। রক্তাক্ত জুলাই-আগস্ট নিয়ে ঈপ্সিতা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এদিকে ৩ থেকে ৫ আগস্ট আন্দোলন-সংগ্রাম ও মিছিলে জমায়েত বেশি হয়েছিল। ৫ আগস্ট শেষ মিছিলে যখন হামলা করা হলো তখন আমরা চলে আসি। তবে অন্যরা সব বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যায় এবং হুইপের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। এরপরই দিনাজপুর শহরের উত্তর বালুবাড়ী এলাকা থেকে প্রথম বিজয় মিছিল বের করি। আমি ও আমার পাড়ার ভাতিজা, ভাগনি, ভাবিসহ সবাই পুরো পাড়ায় মিষ্টি বিতরণ করি। ইরা, সাফি, সিফাত, রাফি, লাল, সবুজ, শিহাব, হাবিবুর, অপূর্ব, রিয়া ভাবি, টুনি চাচিসহ আরো অনেকে ছিলাম। পাড়ায় কোনো পুলিশ বা আর্মির গাড়ি এলে অনেকেই বলত, আমাকে ধরতে এসেছে! ৬ আগস্টের পর এফবিতে বিভিন্ন পোস্টে এসে আমার পরিচিত জনেরা আক্রমণ কর‍ত, আমিও তার জবাব দিতাম। এফবিতে অ্যাকটিভ ছিলাম দেখেই বেশি হুমকি দিত, বাজে মন্তব্য করত, যেটাকে সাইবার আক্রমণ বলে। এরপর বিজয়ের পর যখন বাচ্চারা ট্রাফিকের দায়িত্ব নিল তখন নিজ উদ্যোগে দিনাজপুরের মহারাজার মোড়, জোড়া ব্রিজ ও হাসপাতাল মোড়ে তাদের খাবার দিই।’

উম্মে ছালমা

চট্টগ্রাম

উম্মে ছালমার জন্ম চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ‘মার্চ ফর ঢাকা’ ও বর্তমান বা ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে ছালমা বলেন, ‘৪ তারিখ ঘোষণা হয়েছিল যে ৬ আগস্ট হবে মার্চ ফর ঢাকা। ইমিডিয়েটলি ৫ তারিখের আগে আগে ৪ তারিখ ঘোষণা করা হলেও ৬ তারিখ নয়, ৫ তারিখে হবে মার্চ ফর ঢাকা এবং নেতাদের ঘোষণা এলো শ্রীলঙ্কার স্টাইলে আমরা গণভবন দখল করব। জনতার মুখ থেকে বের হতে থাকল—‘দফা এক দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’ এলো সেই ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। আমরা সবাই শাহবাগ গেলাম। তখনই শুনলাম, অলরেডি ছাত্র-জনতা গণভবনে ঢুকে গেছে। হাসিনা হেলিকপ্টারে করে পালিয়েছেন। এলো আমাদের সেই মুহূর্ত যে মুহূর্তের জন্য আমাদের অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন, অনেক সহযোদ্ধা আহত হয়েছেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন তার বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে এবং তার বাহিনী গেল গর্তে। এই স্বাধীনতা আনতে আমাদের ভাই-বোনেরা আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন। মুগ্ধ, ওয়াসিম, ফাইয়াজ নাসিফা—তাদের ঋণ আমরা জীবনেও শোধ করতে পারব না। সবশেষে, হাসিনা পালানো সমাধান নয়, আমি চাই প্রতিটি আহত মানুষ সুচিকিৎসা পাক, নিহতদের হত্যার যথোপযুক্ত বিচার হোক। কোনো মুগ্ধ আর পানি দিতে না আসুক। মেরুদণ্ড সোজা করে বাংলাদেশি পরিচয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই বিশ্বমঞ্চে। বাংলাদেশ ভারতের আগ্রাসন থেকে মুক্ত হোক। বাংলাদেশ হোক বাংলাদেশিদের জন্য।’

– লেখা সংগৃহীত

সর্বশেষ

A Galinha e o Ouro Domine o Chicken Road e Alcance o Ovo Dourado com um RTP Excepcional de 98%.

A Galinha e o Ouro: Domine o Chicken Road e Alcance o Ovo Dourado...

Joker Poker Power Poker Gioca gratis su CasinoHEX Italia

Alcune delle mie più grandi passioni sono la scrittura, lo sport e il gioco...

Spingrande Casino Vip Program: Unlock Elite Rewards & Perks

This recreation is played across five reels, providing 20 payline mixtures. Come and play...

Find The Solutions To Your Spin Casino Faqs

On the other hand, this model of free spins normally doesn’t come alone, usually...

আরও পড়ুন

Joker Poker Power Poker Gioca gratis su CasinoHEX Italia

Alcune delle mie più grandi passioni sono la scrittura, lo sport e il gioco...

Spingrande Casino Vip Program: Unlock Elite Rewards & Perks

This recreation is played across five reels, providing 20 payline mixtures. Come and play...

Find The Solutions To Your Spin Casino Faqs

On the other hand, this model of free spins normally doesn’t come alone, usually...